খতমে নবুওয়্যাত সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর কিছু ভুল মতামত
মির্যা কাদিয়ানীর দ্বিতীয় পুত্র মির্জা বসীর আহমদ এম এ এর বক্তব্য হচ্ছে, “যে লোক মুছা নবীকে মানে কিন্তু ঈসা নবীকে মানে না, অথবা ঈসা নবীকে মানে কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে মানে না, অথবা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে মানে কিন্তু মসীহ মাওয়ূদকে মানে না সে যে শুধু কাফির তা নয় বরং কট্টর কাফির ও ইসলাম গন্ডি বহির্ভুত।” (কালেমাতুল ফছল ১১০ পৃঃ, রিভিউ অফ রিলিজিয়াস ১৪ খন্ড ৩,৪ নম্বর মার্চ ও এপ্রিল ১৯১৫)
উপরোক্ত বক্তব্য হতে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হয়, ইয়াহুদী ধর্ম, খৃষ্টধর্ম ও ইসলাম যেমন পৃথক পৃথক ধর্ম, তেমনি কাদিয়ানী ধর্মমতও একটি পৃথক ধর্ম। এবং যারা মুছাকে মানে কিন্তু ঈসাকে মানে না, তারা যেমন কট্টর কাফির আবার যারা হযরত ঈসাকে মানে কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে মানেনা তারাও যেমন কাফির ও ইসলামের গন্ডি বহির্ভুত ঠিক অনুরূপ ভাবে যারা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে মানে কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীকে মানে না, কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে তারা শুধু মা‘মুলি কাফিরই নয় বরং কট্টর কাফির ও ইসলামের গন্ডি বহির্ভুত। তার ভাষায় তার পিতা মির্যা কাদিয়ানী, হযরত ঈসা ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সম মর্যাদার অধিকারী। তারা যেমন এক একটি ধর্মের প্রবর্তক, তেমনি মির্যা কাদিয়ানীও একটি ধর্মের প্রবর্তক। পৃথীবির কোটি কোটি মুসলমান যারা মির্যা কাদিয়ানীকে মাহদী, মাসীহ ও নবী হিসাবে মানবে না, তারা সকলই তাদের দৃষ্টিতে শুধু মা‘মুলি কাফিরই নয় বরং কট্টর কাফির ও মির্যা কাদিয়ানীর স্বঘোষিত ইসলামের গন্ডি বহির্ভুত।
“মসীহ মাুয়ূদের এর দাবী যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রত্যাদিষ্ট হয়েছেন এবখ আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে তার সহিত কথোপকথন করেছেন। এ দাবীর প্রেক্ষিতে দু–দিকের এক দিন অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। হয়ত খোদা না খাস্তা এ দাবীতে তিনি মিথ্যাবাদী এবং কেবলমাত্র আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তিনি এ দাবী করেছেন। তবে তিনি শুধু কাফির নন বরং নিকৃষ্ট কাফির। (বাস্তবেও সে তাই ছিল, নিবন্ধকার) অথবা মসীহ মাওয়ূদে তাঁর এ দাবীতে সত্যবাদী, খোদা তায়ালার সহিত অবশ্যই তাঁর কথোপকথন হয়েছে। এমতবস্থায় এ কুফর নিঃসন্দেহে তার অস্বীকারকারী ও অমান্যকারীদের উপর পতিত হবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা আয়াতে নিজেই ঘোষণা করেছেন। সুতরাং এখন তোমাদের উভয় প্রকার অধিকার রয়েছে, হয়ত মসীহ মাওয়ূদের অস্বীকারকারীদের মুসলমান মেনে নিয়ে মসীহ মাওয়ূদের উপর কুফরের ফতুয়া জারি করা, নতুবা মসীহ মাওয়ূদকে সত্যবাদী কেনে তারঁ অস্বীকারকারীদের কাফির গণ্য করা। ইহা কখনও হতে পারে না যে, তোমরা উভয়কেই মুসলমান মনে করবে। কেননা পবিত্র আয়াত পরিষ্কার ঘোষনা দিচ্ছে যে, যদি নবুওতের দাবীদার কাফির না হয়, তবে অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফির। সুতরাং আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, কপটতা ছেড়ে দাও এবং একটি অটল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাও।” (কালেমাতুল ফছল ১২৩ পৃঃ, রিভিউ অফ রিলিজিয়াস ১৪ খন্ড মার্চ ও এপ্রিল ১৯১৫)
মির্যা বশীর আহমেদের বক্তব্য হতে এ সত্যটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে, যে সব মুসলমান তার পিতা মির্যা কাদিয়ানীকে আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট ও ওহী প্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করবে, তাকে তারা নিকৃষ্টতম কাফির মনে করে। পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমান মির্যা কাদিয়ানীর এর দাবীকে মিথ্যাবলে মনে করে। তাই সমগ্র মুসলমানই তাদের দৃষ্টিতে কাফির। সুরাং তাদের ধর্মমত মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ণ এক পৃথক ধর্মমত। যারা তাদেরকে মুসলমান মনে করে তারা আহমকের স্বর্গে বাস করে।
মির্যা কাদিয়ানীর একটি বক্তব্য বিশেষ ভাবে প্রণিধান যোগ্য “খোদা তায়ালা আমার নিকট প্রকাশ করেছেন যে , যার নিকট আমার পৌঁছেছে এবং আমাকে কবুল করেনি। সে মুসলমান হয়, এবং খোদার নিকট শাস্তিযোগ্য।” (মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক রচিত তাযকেরা ৬০০ পৃঃ, কাদিয়ানী মোহাম্মদ, ন্যাশনাল আমীর বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আহমদীয়া কর্তৃক রচিত বিবাহ ও জীবনে ২২ পৃঃ)
উক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে মির্যা কাদিয়ানীর ধর্মমতে যারা বিশ্বাস করে না, তাররা কাদিয়ানীদেরকে মুসলমান মনে করুক বা না করুন, তারা সকলই তাদের ধর্মমত অনুযায়ী অমুসলিক কাফির। তারা যখন বিশ্বের সমগ্র মুসলমান যারা মির্যা কাদিয়ানীকে মানে না তাদেরকে কাফির বলে গণ্য করে তখন মুসলমানটা কি তাকে ও তার ভক্তদেরকে মুসলমান বলে গণ্য করতে পারে? অথচ তার মসীহ মাওয়ূদ ও নবূওতের দাবীর প্রেক্ষিতে উম্মতের সর্ববাদী মতে সে ও তার অনুসারীরা কাফির। তাছাড়া মির্যা কাদিয়ানীর উপরোক্ত উক্তি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে, তার প্রবর্তিত ধর্মমত ইসলাম হতে সম্পূর্ণ পৃথক একটি ধর্মমত।
আরো কিছু কথা
এখানে একটি বিষয় উল্লেখের দাবী রাখে, কাদিয়ানী ধর্মমতের এক শতাব্দীর ক্রিয়াকলাপ প্রমাণ করে, প্রয়োজনের তাগিদে তাদের ধর্মীয় গুরু মির্যা কাদিয়ানীর ন্যায় তারাও প্রকাশ্যে মিথ্যা উক্তি করতে সঙ্কোচ বোধ করে না । আর কেনই বা মিথ্যা উক্তি করবে না, যাদের ধর্মের ভিত্তিই নির্ভেজাল মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের পক্ষে মিথ্যা উক্তি করা একেবারেই স্বাভাবিক। আমরা ইতিপুর্বে তাদের একাধিক উদ্বৃতি দ্বারা প্রমাণ করে আসছি, তারা বিশ্বের একশো কোটি মুসলমানকে কাফির বলে গণ্য করে। এ সম্পর্কে আরো অগণিত উদ্বৃতি পেশ করা হল না। তারা শত সহস্র বার মুসলমানদের কাফির ও কট্টর কাফির বলে উক্তি করার পরও মুনির তদন্ত কমিশনের নিকট এক প্রশ্নের উত্তরে কাদিয়ানীদের উভয় দল নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছে, আমরা গয়র আহমদীদেরকে কাফির মনে করি না। কিন্তু এ ব্যপারে মুনির তদন্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য গণের রিপোর্টের মন্তব্য তাদের এ বক্তব্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
মুনির তদন্ত কমিশন রিপোর্টে মাননীয় বিচারপতিবৃন্দ লিকেছেন, ‘আহমদী (কাদিয়ানী) দের যখন প্রশ্ন করা হল, তারা গয়র আহমদীদেরকে কি এমন কাফির বলে গণ্য করে যারা ইসলাম গন্ডির বহির্ভুত? আহমদীদের উভয় দলই আমাদের সম্মুখে তাদের এ মত প্রকাশ করেছে যে, এ ধরনের লোকেরা আমাদের মতে কাফির নয়। অবশ্য এসব লোকের জন্য আহমদী বইপুস্তক কাফির শব্দটি যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা সাধারণ কাফির কিংবা অস্বীকারকারীর অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও তাদেরকে ইসলামের গন্ডির বহির্ভুত বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এ বিষয়ে আহমদীদের অগণিত ঘোষণা পত্র ও বই পুস্তক আমরা দেখেছি, এবং আমাদের দৃষ্টিতে তাদের এ সকল ঘোষণা পত্র ও বই পুস্তক উল্লেখিত কাফির ব্যাখ্যা ইহা ব্যতীত অন্য ব্যাখ্যা কোন মতেই সম্ভবপর নয় যে, যারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে অস্বীকার করে তারা তাদের দৃষ্টিতে ইসলামের গন্ডির বহির্ভুত কট্টর কাফির‘।
আর তখন তারা সাময়িক স্বার্থে ‘কাফির‘ শব্দটির যা তা ব্যাখ্যা দিয়ে মুসলিম সমাজকে প্রতারিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারপতিগণ সুস্পষ্ট ভাষায় তাদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা পত্যাখ্যান করে ঘোষণা করেছেন, যারা কাদিয়ানী ধর্মমতের বিশ্বাস করে না, কাদিয়ানীগণ তাদেরকে ইসলাম বহির্ভুত কট্টর কাফির গণ্য করে। সুতরাং তদন্ত কমিশনের মতন্তব্য প্রমাণ করে, কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারীরা ইসলামের বিপরীত পৃথক ধর্মমতের বিশ্বাসী। তদন্তের দিনগুলো শেষ হওয়ার পর পুনরায় কাদিয়ানীদের ধর্মীয় নেতারা পূর্বোক্ত বক্তব্য প্রচার আরম্ভ করে। এবং তারা ঘোষণা করতে থাকে নবীজির আগমন দ্বারা নবুওয়তের দ্বার চিররুদ্ধ হয়নি বরং নবীজি (সঃ) পরেও নবী আগমনের সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। আমাদের এ বক্তব্যের সমর্থনে কাদিয়ানী ধর্মমতের দ্বিতীয় খলিফা মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ এর একটি বক্তব্য পাঠক বৃন্দের সম্মুখে পেশ করা হল। “যদও আমার গর্দানের দু‘পাশে তলোয়ারও রাখা হয় এবং আমাকে বল হয়, বল! হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পর আর কোন নতুন নবীর আগমন হবে না, তখনও আমি তাকে বলব, তুই মিথ্যাবাদী চরম মিথ্যাবাদী। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পর নতুন নবী আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং অবশ্যই নবী আসবে”।