Wallpaper

কাদিয়ানী ধর্মমত বনাম ইসলামী দুনিয়ার অবস্থান – মোঃ আবুল কাসেম ভুঞা

মুসলিম বিশ্বের অসংখ্য বিজ্ঞ আলিম ও বিদগ্ধ ইসলামী বুদ্ধিজীবী-চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক কাদিয়ানীদের ব্যাপারে কুফরীর ফাত্‌ওয়া দিয়েছেন বা বহু গ্রন্থ রচনা করে দেখিয়েছেন যে, তারা ইসলাম ধর্ম হতে খারিজ একটি বাতিল ধর্মীয় গোষ্ঠী। এ পর্যায়ে উপমহাদেশের নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণের নাম স্মরণীয়-

মাওলান মুহাম্মদ হুসাইন বাটালভীম মাওলানা মুহাম্মদ আলী মুংগেরী, মাওলানা আ.ফ.মু. সানাউল্লাহ অমৃতসরী (মৃঃ ১৯৪৮), মাওলানা আবুল হাসানাত সাইয়িদ মুহাম্মদ আহমদ কাদিরী (১৮৬১-১৯৬১), মাওলানা আবদুল কাদির রায়পুরী (মৃঃ ১৩৮২ হিঃ), মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মারী (১২৯২-১৩৫২ হিঃ), মাওলানা মুহাম্মদ ইদরীস কান্দালভী (১৩১৭-৯৪ হিঃ), অখন্ড ভারতের গ্রান্ড মূফতি মুহাম্মদ কেফায়েতুল্লা দেহলভী (১৮৭৪-১৯৫৩), মাওলানা মুহাম্মদ আলী জলন্দরী, মূফতী মাহমুদ (১৩৩৪-৮০ হিঃ), মাওলানা গোলাম গাউস হাজারভী (১৮৯৭-১৯৭৭), আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (১৯০৮-৭৭), মাওলানা আতা উল্লাহ শাহ বুখারী (মৃঃ ১৯৬৭), মাওলানা তাজুল ইসলাম (১৮৯২-১৯৬৭), আল্লামা মুহাম্মদ রুহুল আমীন (১৮৮২-১৯৪৫), আল্লামা ডঃ শেখ মুহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৩-১৯৩৮), মাওলানা আবদুল্লাহ্‌ দরখাস্তী (১৩২৪-১৪১৫ হিঃ), কারী মাওলানা মুহাম্মদ তাইয়িব (১৮৯৬-১৯৮৩), খতীবে আযম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ (১৯০৫-৮৭), মাওলানা লাল হোসেন আখতার, মাওলানা আবদুল্লাহিল কাফী (১৮৯৬-১৯৬০), মূফতী দ্বীন মুহাম্মদ খান (১৯০০-৭৪), মাওলানা আবদুল ওহ্‌হাব পীরজী (১৮৯০-১৯৭৬), মাওলানা মুহাম্মদউল্লাহ হাফেজ্জী (১৮৯৫-১৯৮৭), মূফতী মুহাম্মদ শফী (১৩১৪-৯৬ হিঃ), মাওলানা আতহার আলী (১৮৯৪-১৯৭৬), মূফতি আল্লামা সাইয়িদ মুহাম্মদ আমীমুল এহসান মুজাদ্দেদী (১৯১১-৭৪), মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক (১৯১৫-৭৩), মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী (১৯২৩-৯৬) প্রমুখ।

উপরোক্ত অবস্থার আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, কাদিয়ানীরা ইসলাম ধর্মের গন্ডি-বহির্ভূত একটি জাতি-গোষ্ঠী। ইসলামী শরীআতী আইনে তারা কাফির বলে ঘোষিত হয়েছে। তারা নিজেরাও মুসলমানদেরকে গালাগালি দিয়ে কার্যতঃ ইসলাম হতে সরে পড়েছে। সুতরাং তাদের নিজের স্বার্থে ও মুসলমানদের স্বার্থে কাদিয়ানীদেরকে সাংবিধানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা দেয়া মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের অবশ্য কর্তব্য। বিশ্বের মুসলমান যাদেরকে মুসলিম বলে মনে করে না তাদের মুসলিম নাম ও ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করতে দেয়া উচিত নয়। আর এটা কোন পার্টির রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা ঈমানের বিষয়। এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে মহান আল্লাহ্‌ তা’আলার সমীপে জবাবদিহি করতে হবে।

যায়দ বেন হারিসা (রাঃ)-কে যখন তার গোত্রের লোকেরা ফেরত নিতে আসে তখন রাসূল (সাঃ) তাদের বলেন- “আমি তোমাদের নিকট একটি জিনিস চাই। সেটা হলো, তোমরা সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি নবী ও রাসূলদের সমাপ্তকারী।”- হাকিম (মুসতাদরাক)। (এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, হযরাত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিঃশর্তভাবে শেষ নবী হিসেবে মান্য না করলে কেউ মুসলমান হতে পারবে না।)

অমুসলিমদের মতেও কাদিয়ানীরা মুসলমান নয়

বিশ্বের অনেকগুলো অমুসলিম সংস্থা ও দেশ কাদিয়ানীদেরকে মুসলমান মনে করে না। ইসলামের শাম্বত আকীদা-বিশ্বাস আর কাদিয়ানীদের জাল ও বিকৃত আকীদা অধ্যয়ন করে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পর্যায়ে মরিশাস প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ আফ্রিকার সুপ্রিম কোর্টগুলো (সর্বোচ্চ আদালত) কাদিয়ানী বা আহমদীদেরকে মুসলিম সমাজ-বহির্ভূত একটি অমুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯১৯ সাল হতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মামলার রায়ে আদালত এ সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন। ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ফেডারেল কোর্টে কাদিয়ানীদের দায়েরকৃত মামলাতে বিচারপতি মিঃ উইলিয়ামস তাদের অমুসলিম বলে স্পষ্ট রায় দিয়েছেন।

কাদিয়ানী ধর্মের প্রবর্তক মির্যা সাহেবের জন্মস্থানের মালিক স্বাধীন ভারতও এখন আর কাদিয়ানীদেরকে মুসলিম বলে স্বীকার করে না। এটাও সেখানকার অনেকগুলো আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে নেয়া হয়েছে। স্বাধীন ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের অতিরিক্ত বিচারপতি মাননীয় শ্রী নামভাট যোশী ১৯৬৯ সালের ২৮৮ নম্বর মামলার রায়ে বলেন- “যে ব্যক্তি মির্যা গোলাম আহমদকে মান্য করে তাকে কখনো মুসলমান বলা যায় না।” –কলকাতার ‘প্রতাপ’ পত্রিকার (২১শে জুলাই ১৯৭৪ সংখ্যা) সম্পাদক শ্রী কে, নরেন্দ্রজী আহমদীদের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করে মন্তব্য করেন যে, আহমদীদের বিশ্বাস যদি এরূপ হয় যে, যখনই জনগণ ভুল পথে চলবে, তখনই তাদের মুক্তির জন্য এবং তাদেরকে সৎপথে আনার জন্য কোন নবী আসবে, তবে এ ঘোষণা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ‘ভগবৎ গীতা’য় যা বলেছেন এর অনুরূপ হবে। তাহলে আহমদীদেরকে স্বীকার করতেই হবে যে, তারা মুসলমানদের চেয়ে হিন্দুদের অধিক নিকটবর্তী। কলকাতার ‘আবশার’ পত্রিকার ৩রা আগষ্ট ১৯৭৪ সংখ্যাতেও একই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। বস্তুতঃ অবতারবাদ সম্বন্ধীয় কাদিয়ানীদের বিশ্বাস হিন্দুদের মত হুবহু এক ও অভিন্ন।

IATA হলো বিশ্বব্যাপী বিমানের টিকেট বিক্রেতা ট্রাভেল এজেন্সীগুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান কার্যালয় সিংগাপুরে অবস্থিত। কাদিয়ানীরা অমুসলিম বলে তাদের সৌদী আরব তথা হারামাইন শরীফাইনে যাওয়া নিষিদ্ধ। তাই উক্ত সংস্থার সর্বোচ্চ কাউন্সিল সৌদী আরবে ভ্রমণের জন্য কাদিয়ানীদের নিকট টিকেট বিক্রি নিষেধ করেছে। বিমানের টিকেটের মূল্য ও বিমান পথের নির্দেশ সম্বলিত ABC-Air Travel Guide নামক সুবৃহৎ মাসিক পুস্তকটিতে এ নিষেধাজ্ঞা বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে উল্লেখিত হয়েছে। অমুসলিম নিয়ন্ত্রিত সংস্থা হয়েও এ প্রতিষ্ঠানটি কাদিয়ানীদের মুসলমান মনে করে না।

১। Falsehood of Qadianism – Published by Muslim Missionary Society (JAMIAH), Singapore.

২। Qadianis – THREAT TO ISLAMIC SOLIDARTY – Govt. of Pakistan Publications.

৩। MIRZA IS ARE NON-MUSLIM and Fatua of the Al-Azhar – Published by Islamic Publication Bureau, Atholone, Cape town, S.A.

৪। Resolutions and Recommendations of the Second Session of the council of the Islamic Fiqha Academy, Jeddah, KSA.

৫। ABC –Air Travel Guide, 1977, Reed Group of Publication, Bedfordshire, England.

৬। ফাত্‌ওয়া-ই-তাকফীরে কাদিয়ান- কুতুবখানা এযাযিয়া, দেওবন্দ, ভারত।

৭। মাসিক পৃথিবী (ঢাকা), ৫ম বর্ষ, ১ম খন্ড, অক্টোবর ১৯৮৫।

৮। মাসিক মদীনা (ঢাকা), জানুয়ারী ১৯৮৭ সংখ্যা।

৯। “কাদিয়ানী কাহিনী- গোলাম আহমদের যবানী” মাওলানা হাফিয শায়খ আইনুল বারী কর্তৃক সংকলিত ও কলকাতার হাওলাদারপাড়া জামে মসজিদ হতে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত।

১০। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ঢাকা, ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৯২।

Comments are closed.

ওয়েব সাইটে অনুসন্ধান করুন

আপনি যা চাচ্ছেন তা খুজে পাচ্ছেন না?