Wallpaper

খতমে নবুওয়্যাত সম্পর্কে কিছু তথ্য

খতমে নবুওয়্যাত সম্পর্কে নবী করীম (সঃ) এর কিছু হাদীস

  • রসুলে করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, “রিসালত ও নবুওয়তের ধারাবাহিক সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। আমার পরে নতুন কোন রসুল ও নবী আগমন হবে না।” (তিরমিজী শরীফ ও মোস‍্ নাদে আহমদ)
  • নবী করীম (সঃ) ফরমান: “আম্বিয়ায়ি কিরাম বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব দিতেন। যখনই কোন নবী ইন্তেকাল করতেন তখনই পরবর্তী নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে নতুন কোন নবী আসবেন না বরং খলিফাগণ প্রতিনিধিত্ব করবেন ”। (বোখারী শরীফ কিতাবুল আম্বিয়া)
  • নবী করীম (সঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন, “হে আলী। তোমার সহিত আমার সম্পর্ক এমন, যেমন মুসা (আঃ) এর সহিত হারুনের ছিল। কিন্তু পার্থক্য এতটুকুই যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই”। (তিরমিজী দ্বিতীয় খন্ড ২১৪ পৃঃ, বোখারী ও মুসলিম)
  • তাজেদারে মদীনা হযরত রসুল করীম (সঃ) নবুওয়তকে একটি প্রাসাদের সাথে তুলনা করে বলেছেন, আমি আর আমার পূর্ববর্তী নবীগণের দৃষ্টান্ত এমন যেমন কোন ব্যক্তি অতি সুন্দর ও চমৎকার একটি প্রাসাদ তৈরী করেছে কিন্তু এক স্থানে একটি ইটের স্থান ফাঁকা রেখে দিয়েছে। লোকজন তার চতুর্দিকে ঘুরে ফিরে দেখে প্রাসাদের সৌন্দর্য অবলোকন করে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছিল এবং ও কথাও বলছিল; এমন সুন্দর প্রাসাদে একটি ইটের স্থান কেন খালি রাখা হলো? আমিই সেই ইট এবং আমিই সর্বশেষ নবী”। অর্থাৎ আমার আগমন দ্বারা নবুওয়াতের প্রাসাদ পূর্ণতা লাভ করেছে। এখন আর কোন স্থানে খালি নেই। সুতরাং উহাকে পূর্ণতা প্রদানের জন্য আর কোন নবীর আগমনের প্রয়োজনও নেই। (বোখারী কিতাবুল মানাক্বিব)

অতীতের বুজুর্গানে দ্বীন এই সম্পর্কে বলেছেন

  • ইমাম আযম আবুহানিফা (রঃ) (৮০ হিঃ১৫০ হিঃ) এর যুগে এক কুলাঙ্গার নবুওয়াতের দাবী করে বলেছিল, “নবুওয়তের প্রমাণ পেশ করার জন্য আমাকে সুযোগ দেয়া হোক”। এর উত্তরে ইমাম আযম বলেছিলেন, “যে কেউ তার নিকট নবুওয়তের প্রমাণ দাবী করবে, সেও কাফির বলে গণ্য হবে। কেননা নবীজি (সঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘ আমার পরে কোন নতুন বীর আগমনের অবকাশ নেই।আর প্রমাণ দাবী করা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে উপরোক্ত হাদীছ ও উম্মতের ইজ‍্মায়ে বিশ্বাস করে না। তাই সে কাফির বলে গণ্য হবে”।
  • ইমাম তাহাভী (রঃ) (২৩৯ হিঃ৩২১ হিঃ) অতীতের বুজুর্গানে দ্বীনের বিশেষ করে ইমাম আবু হানিফা, ইমা আবুইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের (রঃ) আক্বীদার বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, “হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা, রসুলগনের সর্দার, নবীগণের শেষ নবী ও আল্লাহ তায়ালার অতি প্রিয় নবী। তাঁর পরে যে কোন প্রকার নবুওয়তের দাবী গোমরাহি, কুফর ও অন্তরের কুপ্রবৃত্তির গোলামী বৈ আর কিছুই নয়”। (শরহুত্তাহাভীয় ফি আক্বীদাতিচ্ছলফিয়া)
  • আল্লামা ইব্‍নে হাযম উন্দোলছী (রঃ) (৩৭৪ হিঃ৪৫৬ হিঃ) লিখেছেন, “নবী করীম (সঃ) এর ইন্তেকালর পর হতে ওহী অবতরণের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর প্রমাণ স্বরূপ বলা যাবে, ওহী কেবল মাত্র নবীর নিকটই অবতীর্ণ হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘মুহাম্মদ (সঃ) তোমাদের মধ্য হতে কোন পুরুষের পিতা নন বরং আল্লাহর রসুল ও সর্ব শেষ নবী‘”
  • ইমাম গাযালী (রঃ) (৪৫০ হিঃ৫০৫ হিঃ) ফরমান, “কোরআন, হাদীস ( ‘লা নাবিয়্যা বাদী আমার পরে কোন নবীর আবির্ভাব হবে না) ও হুজুর (সঃ) এর বিভিন্ন অবস্থা সমূহ হতে সমগ্র উম্মত সর্ব সম্মত ভাবে এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছে, তাঁর পরে আর কোন রসূলেরও আবির্ভাব হবে না এবং আর কোন নবীও আসবেননা।” (আল ইকতেছাদু ফিল ইতেক্বাদ)
  • আল্লামা ইবনে কাসীর তাঁর বিখ্যাত তফসীরে লিখেছেন, “সুতরাং সুরা আহযাবের ৪০ তম আয়াত এ ব্যাপারে অতি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে যে, নবী করীম (সঃ) এর পর আর কেন নতুন নবীর আগমন সম্ভবপর নয়। যদি কেউ আজগুবি কিছু প্রদর্শনের মাধ্যমে অথবা অলৌকিক ক্রিয়া কর্ম কিংবা যাদুর ভোজবাজি দেখিয়ে নবুওয়াতের দাবী করে, তাহলে তাকে মিথ্যাবাদী, দাজ্জাল, শয়তান ও কাফির মনে করতে হবে। এবং এটাও মনে করতে হবে যে, সে লোকদের গোমরাহ করতে আহবান করছে ”।
  • হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীতে বাদশাহ্ আলমগীরের নির্দেশে ভারতবর্ষে সর্বজন মান্য উলামায়ে কিরাম ফতয়ায়ে আলমগীরীসংকলন করেছিলেন। উক্ত ফতোয়ার কিতাবে লিখা আছে, “যদি কেউ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সর্বশেষ নবী না মানে, তবে সে মুসলমানদের সর্ববাদী মতে অমুসলিম, কাফির এবং মুরতাদ। তাকে হত্যা করা মুসলমানদের উপর ওয়াজিব”।
  • হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রঃ) খলিফা হওয়ার পর মুসলিম উম্মাহর সম্মুখে সর্ব প্রথম যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন, “কোরআনের পর আর কোন কিতাব আকাশ থেকে আসবে না এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পর আর কোন নতুন নবীর আগমন হবে না”। (তারীখুল খোলাফা: ১৫৭ পৃষ্ঠা)
  • মাওয়াহেবে লাদুনিয়া” নামক বিখ্যাত গ্রন্থে বলা হয়েছে, “আম্বিয়ায়ে কিরামের সংখ্যা কত এ ব্যপারে উম্মতের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে হযরত আদম (আঃ) যে সর্ব প্রথম নবী আর হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) যে সর্ব শেষ নবী, এ ব্যপারে উম্মতের মধ্যে কারো কোন মতানৈক্য নেই। বরং হযরত মহাম্মাদ (সঃ) যে সর্বশেষ নবী এ ব্যাপারে উম্মতের বৃহত্তম ইজমা তথা ঐক্যমত রয়েছে”
  • ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কর্তৃক রচিত ফিকহে আকবারের শরাহ এ মোল্লা আলী ক্বারী লিখেছেন, “হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পরে কেউ নবী হওয়ার দাবী করলে উম্মতের সর্ববাদী মতে সে নিঃসন্দেহে কাফির বলে গণ্য হবে।”

হযরত ঈসা (আঃ) তো পৃথিবীতে আবার আসবেন, তাহলে খতমে নবুওয়্যাত তো মিথ্যা হয়ে গেল?

  • আল্লামা জমখশারী (রঃ) (৪৬৭ হিঃ৫৩৮ হিঃ) তাঁর বিখ্যাত তফসীরে কাশশাফে লিখেছেন, “তুমি যদি প্রশ্ন উত্থাপন কর, শেষ যুগে হযরত ঈসা (আঃ) এর আগমন যখন সুনিশ্চিত, তখন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কি করে সর্বশেষ নবী হলেন? এ কথার উত্তরে আমরা বলবো তিনি সর্ব শেষ নবী এই অর্থে যে, তাঁর পরে আর কোন ব্যক্তিকে নতুন ভাবে নবুওয়াতের পরে অধিষ্ঠিত করা হবে না। পক্ষান্তরে হযরত ঈসা (আঃ) ঐ সকল নবীগণের একজন, যারা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পূর্বে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছে। অতঃপর হযরত ঈসা (আঃ) এসে মুহাম্মদ (সঃ) এর শরীয়ত মেনে চলবেন এবং আমাদেরই কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়বেন। তিনি যদিও পূর্বের নবী, কিন্তু শেষ যুগে এসে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মতের একজন সদস্য হিসাবে তাঁরই শরীয়ত মেনে চলবেন ।”
  • আল্লামা কাজী বায়জাভী তাঁর রচিত তফ্সীর আনওযারুত্তানজীলে লিখেছেন, “হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নবী। তাঁর আগমন দ্বারা নবুওয়্যাতের ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে। অথবা এও বলা যায়, তাঁর আগমন দ্বারা আম্বিয়া কিরামের, ধারাবাহিকতার শীল মেরে মোহরাঙ্কিত করে দেওয়া হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় আর কারো প্রবেশাধিকার রইল না। আর হযরত ঈসা (আঃ) আগমনের দ্বারা এ মোহরারের মাঝে আঘাত করা হয়নি। কেননা তিনি যখন আসবেন, তখন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দ্বীনের বিধান মেনেই চলবেন।”

Comments are closed.

ওয়েব সাইটে অনুসন্ধান করুন

আপনি যা চাচ্ছেন তা খুজে পাচ্ছেন না?